বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
Rajat Bose | ০৪ মে ২০২৪ ১১ : ৫৫Rajat Bose
নীলাঞ্জনা সান্যাল: থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত প্রতিমা। প্রতিমা মাইতি। মাসে দু’বার রক্ত নিতে হাওড়ার বাকসির কোটাইপাড়া থেকে আসতে হয় কলকাতার মেডিক্যাল কলেজে। জীবনের যুদ্ধে টিকে থাকার জন্য খেতে হয় ওষুধ। বাড়ির আর্থিক অবস্থা এমন নয় যে এসব সামলে মেয়ের কলেজে পড়ার খচর সামলানো যাবে। তারই মধ্যে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখে প্রতিমা। আরও পড়তে চায় সে। ‘কন্যাশ্রী’র টাকায় স্কুল শেষ করে কলেজে পা রেখেছে প্রতিমা। স্কুলেও প্রতি বছর পেয়েছে কন্যাশ্রীর টাকা। কলেজে ভর্তি হতে পেয়েছে এককালীন ২৫ হাজার টাকা। এই টাকাতেই বাগনান কলেজে ভর্তি হয়েছে। প্রতিমা জানাল, কন্যাশ্রীর এই টাকা না পেলে কলেজে ভর্তি হওয়া হত না তার। এই টাকাতেই পড়তে হবে। বাড়তি খরচের সামর্থ্য নেই বাবা–মায়ের। তাই টিউশন নিতে পারেনি। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলে যে যে চাকরি পাওয়া যায় সেগুলোর চেষ্টা করছে। ‘একটা কাজ পেলে বড় ভাল হয়’ বলে জানাল প্রতিমা। ঘর জুড়ে অভাবের ছাপ স্পষ্ট। মা রাধারানী জানালেন, স্বামীর স্থায়ী কোনও কাজ নেই। তিনি নিজে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা পান। সব দিয়ে কুড়িয়ে–বাড়িয়ে দিন চলে যায়। মেয়ের চিকিৎসার পেছনেই সব খরচ হয়ে যায়। পড়াশোনার বড় ইচ্ছে মেয়ের। সরকারের থেকে কন্যাশ্রীর টাকা না পেলে প্রতিমার আর পড়া হত না। পড়ার পেছনে খরচ করার সামর্থ্য তাদের নেই।
শুধু একা প্রতিমা নয়, এমন হাজার হাজার প্রতিমার ভরসা ‘কন্যাশ্রী’। গ্রাম ঘুরে দেখা গেল, প্রতি ঘরেই রয়েছে বাংলার ‘কন্যাশ্রী’রা। কলেজে পড়ছে। দু’চোখ জুড়ে কিছু করার স্বপ্ন মাখা রয়েছে। সংসারে শত অভাব–টানাটানি থাকলেও, কন্যাশ্রীর দৌলতে যাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়নি। ভাই বা দাদার পড়ার জন্য যাদের নিজেদের কলেজে পড়তে যাওয়া আটকায়নি। যারা সরকারের থেকে দেওয়া নিজেদের টাকাতেই পড়াশোনা করছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির স্বপ্নের প্রকল্প এই ‘কন্যাশ্রী’। ২০১৩ সালে চালু হয়। মূল উদ্দেশ্য হল, মেয়েদের পড়াশোনা চালাতে টাকা যেন কোনও বাধা না হয়। ২০১৭ সালে পায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এই প্রকল্পে (কে ওয়ান) স্কুলস্তরে পড়াশোনার খচর বাবদ বছরে হাজার টাকা মেলে। ১৮ বছরের পর কন্যাশ্রী–২ প্রকল্পে অবিবাহিত মেয়েদের পড়াশোনার জন্য এককালীন দেওয়া হয় ২৫ হাজার টাকা। বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে কে–৩ প্রকল্পেও ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা প্রতি মাসে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। হাওড়ার তাজপুর পঞ্চায়েতের উপ–প্রধান গোলাম খানের অফিসে বসেই হচ্ছিল কথা। গোলাম জানালেন, ‘কন্যাশ্রী প্রকল্প বিশেষ করে গ্রামের মেয়েদের জীবনকে দেখার দৃষ্টিটাই পাল্টে দিয়েছে। কলেজ পর্যন্ত সবাই পড়ছে। তার সঙ্গে নিজেরা টিউশনি করে নিজেদের খরচ নিজেরা চালাচ্ছে। বাড়ির লোকদের পড়ার খরচ দিতে হচ্ছে না। আগে স্কুল শেষ হলেই ছোট বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার যে প্রবণতা ছিল, সেটাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আটকানো গেছে।’
কন্যাশ্রীর টাকা না পেলে কলেজে ভর্তি হওয়া সম্ভব হত না রিয়া খাতুনের। পূর্ব বর্ধমান জেলার রায়না বিধানসভার রায়না ১–এ বাড়ি রিয়ার। ভর্তি হয়েছে গোতান কলেজে। জানালেন, কলেজে ভর্তি হতে সব মিলিয়ে হাজার ছয়েক টাকা লেগেছিল। বাড়ি থেকে এই টাকা দেওয়া সম্ভব হত না। কন্যাশ্রীর টাকাতেই ভর্তি হয়েছেন তিনি। বাংলা অনার্স নিয়ে শ্যামসুন্দর কলেজে পড়ছেন বীথি মুখার্জি। বীথির বোন স্নেহাও কলেজে পড়ছে। দু’জনেই পেয়েছেন কন্যাশ্রীর টাকা। বীথি জানালেন, কলেজে ভর্তি হতে লেগেছিল ৫ হাজার। এছাড়াও প্রতি সেমেস্টারে ভর্তি হতে খরচ ৩ হাজার টাকা করে। কন্যাশ্রীর টাকা পেয়ে খুবই সুবিধা হয়েছে। তাঁদের দুই বোনের পড়ার খরচ আর বাবাকে দিতে হয় না। কন্যাশ্রীর টাকা থেকেই হয়ে যায়। কলেজ শেষ করে আরও পড়ার ইচ্ছা রয়েছে বীথির।
পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ সহেলিদের। সহেলি পোড়েল। রায়না ১–এই বাড়ি। সদ্য শ্যামসুন্দর কলেজে ইতিহাস নিয়ে চার বছরের স্নাতক কোর্সে ভর্তি হয়েছে সহেলি। সহেলি জানাল, যদি কন্যাশ্রীর টাকা না পেত তাহলে কলেজে ভর্তি হতে পারত না। বাবা টুকটাক কাজ করেন। মা অসুস্থ, তাই বাড়িতেই। কলেজে এনসিসি করে সহেলি। শুধু পড়াশোনার কাজেই নয়, এনসিসির জুতো, পিটি ড্রেস কিনতেও কন্যাশ্রীর টাকা কাজে লেগেছে। সহেলি জানাল, আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। কলেজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই। শুনেছি বিশ্ববিদ্যালয় স্তরেও কন্যাশ্রীর টাকা পাওয়া যায়। ভবিষ্যতে পুলিশ হতে চায় সহেলি। কন্যাশ্রীর টাকা না পেলে কলেজে পড়া হত না মধুমিতা পোড়েলের। শ্যামসুন্দর কলেজে সংস্কৃত অনার্স পড়ছে মধুমিতা। কন্যাশ্রীর সব টাকা খরচ না করে ব্যাঙ্কে কিছু রাখা আছে। শুধু কলেজে ভর্তিই নয়, টিউশনি খরচও কন্যাশ্রীর টাকা থেকেই দেওয়া হয়। তবে শুধু কন্যাশ্রীর টাকা নয়, আরও কয়েকটি স্কলারশিপের টাকাও পায় মধুমিতা। হাওড়ার উলুবেড়িয়া লোকসভার অন্তর্গত ঘোষালচক গ্রামে বাড়ি তাঞ্জিলা খাতুনের। কন্যাশ্রীর টাকা না পেলে কলেজে পড়া হত না তাঞ্জিলার। বাবা লেদ কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন। তাঞ্জিলার পরে আরও তিনটে ভাইবোন আছে। তাঞ্জিলা জানাল, আর্থিক কারণেই উচ্চ মাধ্যমিকের পর পড়াশোনায় ইতি পড়ে যেত যদি না কন্যাশ্রী থাকত। এই টাকা দিয়েই কলেজে ভর্তি হয়েছে সে, জানাল আরও পড়ার ইচ্ছা আছে। হাওড়ার তাজপুরের কাঁড়ার পাড়ায় বাড়ি সুদীপ্তা মণ্ডল কাঁড়ারের। আমতা কলেজে ভূগোল অনার্স নিয়ে পড়েছে সুদীপ্তা কন্যাশ্রীর টাকাতেই। সুদীপ্তার কথায়, মা বাড়িতে টিউশনি করতেন আর বাবা দিন মজুরের কাজ করতেন। কলেজে ভর্তি হতে সেই সময় যে টাকা লেগেছিল তা বাড়ি থেকে দেওয়া সম্ভব ছিল না। কন্যাশ্রীর টাকা না পেলে হয়ত আর পড়াই হত না। এতগুলো টাকা কোথা থেকে পেতাম। আমতা রামসদয় কলেজে স্নাতকে মাইনর–এ ভর্তি হয়েছে তিয়াসা পাল। কলেজে ভর্তি কন্যাশ্রীর টাকায়। বাকি টাকা ব্যাঙ্কে রাখা আছে।
বিশেষ খবর
নানান খবর
নানান খবর
তাপমাত্রার পতন, বাংলায় ভরপুর শীতের আমেজের সম্ভাবনা, কনকনে ঠান্ডা কি নভেম্বরেই? ...
'তামাক মুক্ত সমাজ চাই', সচেতনতা বাড়াতে অভিনব উদ্যোগ স্বাস্থ্য দপ্তরের...
দীর্ঘ অপেক্ষার পর সাজো সাজো রব, ফিরছে শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা ...
দু’একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া ছয় বিধানসভার উপনির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ভোট...
দু’একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া ছয় বিধানসভার উপনির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ভোট...
পরিত্যক্ত গাড়িতে খেলতে গিয়ে ঘটে গেল বিপদ, আগুনে ঝলসে গেল চার শিশু...
যদি বন্ধু হও, যদি বাড়াও হাত, একযুগ পরে আবার বসল বন্ধু পাতানোর মেলা...
বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ, মানসিক অবসাদে আত্মঘাতী মেয়ে ...
চুপিচুপি জড়ো হয়েছিল ডাকাতি করতে, হানা দিয়ে বড় সাফল্য পুরুলিয়ার পুলিশের...
'গরুর ডাক্তারের কাছে যান', রোগ সারাতে পরামর্শ চিকিৎসকের, সুপারের কাছে নালিশ রোগীর ...
বুধের সকালে রাজ্যের ছয় বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন, নজরে হাড়োয়া ও নৈহাটি...
অটো করে যাচ্ছিলেন যাত্রীরা, হঠাৎ সজোরে ধাক্কা লরির, মুর্শিদাবাদে ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনা...
চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী শোভাযাত্রা, সরাসরি সম্প্রচারিত হল অত্যাধুনিক আলোর খেলা...
রাখে হরি মারে কে, দুরন্ত গতিতে আসা ট্রেনের সামনে পড়েও অদ্ভুতভাবে রক্ষা বৃদ্ধের, কে বাঁচালেন জানেন? ...
সুফল বাংলার স্টলে হানা দিয়ে পচা শাকসবজি সরিয়ে দিলেন মহকুমা শাসক...
ব্যাঙ্ক থেকে আপাতত আর টাকা তুলতে পারবেন না মুর্শিদাবাদের কয়েক হাজার পড়ুয়া, কী এমন ঘটল?...